বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৫টা। যেন পিনপতন নীরবতা রাজধানীর বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে।
ফাঁকা মঞ্চ, মঞ্চের নীলাভ আলোর মোহনায় কেমন এক হাহাকার জাগানো আবহ সংগীত। এভাবেই শুরু ‘৪.৪৮ মন্ত্রাস’ নাটক।
দর্শক সারিতে ছিলেন শুধু বিশ-পঁচিশজন সংবাদকর্মী। আর কোনো দর্শক থাকার কথাও ছিল না। নাটকের এই বিশেষ প্রদর্শন ছিল শুধু সংবাদকর্মীদের জন্য।
সংবাদকর্মীরাও খুব সতর্কভাবে নিঃশব্দে ছবি-ভিডিও ধারণ করেছেন। তবে নাটকের মগ্ন হয়ে কেউ কেউ ভুলে যান দৃশ্য ধারণের কথা।
ব্রিটিশ নাট্যকার সারাহ কেইনের ‘৪.৪৮ সাইকোসিস’ থেকে বাংলাদেশের এই সময় আর বাস্তবতাকে তুলে ধরে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যকার সৈয়দ জামিল আহমেদ।
নাটকে গুম-খুন-ধর্ষণ-বলাৎকার-ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার মতো ঘটনা সংবেদনশীল মানুষের মনে যে প্রভাব ফেলে তা দেখানো হয়েছে এক তরুণ শিল্পীর একক কথনে। কিন্তু শেষ জানা যায় না, কী হলো এই বিষণ্ণ তরুণ শিল্পীর জীবনে।
কারণ পুরো নাটক মঞ্চস্থ করা হয়নি। ১১টি দৃশ্য দেখানো হয়েছে, বাকি আছে ১৩টি। যদিও পুরো নাটকই দেখার অপেক্ষায় ছিলেন সংবাদকর্মীরা।
নাটক শেষে নাট্যকার সৈয়দ জামিল বলেন, ‘আমাদের বর্তমান বাস্তবতা, সেই বাস্তবতার বিরুদ্ধে কোনো মানুষের চামড়া যদি একটুও সংবেদনশীল থাকে- তখন তার তীব্র অস্থিরতা তৈরি হয়। সেই অস্থিরতা থেকেই এই মন্ত্রাস। এটাই মূল কথা।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা একটি জায়গায় অনেকগুলো মৃতদেহের ছবি দেখেছেন এই নাটক এসবের বিরুদ্ধে। এই যে দেখেন বলাৎকার হয়, প্রতিনিয়ত হয়ে চলছেই। মেয়েদেরকে গুম-হত্যা করা হচ্ছেই। তারপর মানুষকে গুলি করে মারা হচ্ছে, উধাও হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই বাংলাদেশে এটা কেন হবে?’
যার কথনে এগিয়েছে পুরো নাটকটির কাহিনী, সেই তরুণ শিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন মহসিনা আক্তার।
নাটকটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘নাটকটি যেই পড়ে তারই মনে হয় এটা আমার গল্প। মানসিকভাবে মেলাতে আমার কোনো সংকট হয়নি।’
মহসিনা আক্তার বলেন, ‘আমি সত্যি মনে করি আমি এসব ঘটনার জবাব চাই। আমার কাছে চাই, প্রত্যেকের কাছে চাই।’
সারাহ কেইনের ‘৪.৪৮ সাইকোসিস’ থেকে নাটকটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন শাহমান মাইশান ও শরীফ সিরাজ।
১৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মহিলা সমিতির মিলনায়তনে নাট্য সংগঠন ‘স্পর্ধা’র দ্বিতীয় প্রযোজনা নাটক ‘৪.৪৮ মন্ত্রাস’ মঞ্চস্থ হবে।
এতে আরও অভিনয় করেছেন কৌশিক বিশ্বাস, ইরফান উদ্দিন, শারমিন আক্তার শর্মী, মুর্তাজা জোবায়ের শুভ, সাক্ষ্য শহীদ, তাবিন, সোহেল রানা ও তানভীর।
প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় নাটকটির একটি করে প্রদর্শনী হবে। মাঝে শুক্রবার-শনিবার দুটি করে প্রদর্শনী হবে বিকেল সাড়ে ৪টা ও সন্ধ্যা ৭টা থেকে। শেষ দিনে নাটকটির প্রদর্শনী হবে বিকেল ৪টায়।